মোহাম্মদ মজনুজ্জামান : কিরগিজস্তান মধ্য এশিয়ার পূর্বভাগের একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর পূর্বে গণচীন,পশ্চিমে উজবেকিস্তান,দক্ষিনে তাজিকিস্তান এবং উত্তরে কাজাখস্তান। কিরগিজস্তানকে মধ্য এশিয়ার সুইজারল্যান্ড বলা হয়। সবুজ-শ্যামল ও পাহাড়বেষ্টিত অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত মুসলিম দেশ কিরগিজস্তান। স্থলবেষ্টিত পাথুরে দেশটিতে কোনো সমুদ্রের দেখা না পেলেও নীরবে বয়ে যায় অসংখ্য পাহাড়ি নদী ও ঝরনাধারা। যা থেকে উৎপাদিত হয় প্রচুর পরিমাণ জলবিদ্যুৎ। এ ছাড়া দেশটিতে রয়েছে তেল, গ্যাস, দস্তা, ইউরেনিয়াম ও সোনার মতো মূল্যবান খনিজ সম্পদ।

১৮শ শতকের শেষের দিকে কিরগিজিস্তান রুশ সামরাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৯২৪ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়। ১৯৩৬ সালে দেশটিকে  সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ৩১ আগস্ট কিরগিজস্তানের স্বাধীনতা দিবস। বিশকেক দেশটির রাজধানী। কিরগিজস্তানের মুদ্রার নাম  কিরগিজস্তান সোম (কেজিএস)। শহরগুলো হচ্ছে: বিশকেক প্রধান শহর ও রাজধানী, ওশ, জালাল-আবদ এবং কারাকোল। কিরগিজস্তানে তিয়েনমান পর্বতমালা অবস্থিত।

কিরগিজস্তানের আয়তন এক লাখ ৯৯ হাজার ৯৫১ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৬২ লাখ এক হাজার ৯১২ জন।  জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুযায়ী প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ২৭ জন লোক বসবাস করে। কিরগিজস্তানে রয়েছে মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। মোট জনসংখ্যার ৮৩ শতাংশ মুসলিম এবং তাদের বেশির ভাগ সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী। এ ছাড়া অর্থডক্স খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইহুদি ধর্মাবলম্বী রয়েছে দেশটিতে। প্রাকৃতিক বৈচিত্রের মতো এখানে রয়েছে জাতিগত ভিন্নতা। কিরগিজ, উজবেক, রুশ, উইঘুর, দাগান প্রভৃতি নৃতাত্তি¡ক জাতি কিরগিজস্তানে বসবাস করে।

কিরগিজিস্তানের সরকারি ভাষা কিরগিজ। এই ভাষাতে কিরগিজিস্তানের অর্ধেকের বেশি লোক কথা বলেন। এছাড়াও রুশ ভাষা বেশি প্রচলিত। এখানে অন্যান্য ভাষার মধ্যে আছে উজবেক ভাষা, চীনা ভাষা, মঙ্গোলীয় ভাষা ও উইগুর ভাষা।

দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় অনুরাগ বাড়ছে এবং সেখানে ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটছে। বর্তমানে দেশটিতে আড়াই হাজারের মতো মসজিদ, ৮১টি ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৬৮টি সরকার অনুমোদিত সংস্থা ও সংগঠন রয়েছে। সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরো একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। কিরগিজ মুসলিমরা এখন আগ্রহের সঙ্গে মসজিদে আসে, তাদের সন্তানদের ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে এবং উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলোতে পাঠায়। এভাবে ক্রমেই কিরগিজস্তানে ইসলাম বিকশিত হচ্ছে।

যোগাযোগব্যবস্থা: সুউচ্চ পাহাড়ি ভূ-প্রকৃতি কিরগিজিস্তানের পরিবহন ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। কিরগিজিস্তানের সড়কগুলি খাড়া পাহাড়ী ঢাল বেয়ে সর্পিলাকারে উঠে নেমে চলে গেছে। অনেকসময় এগুলিকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩০০০ মিটার উঁচু গিরিপথের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শীতকালে উচ্চ উচ্চতার দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ভ্রমণ অত্যন্ত দুঃসাধ্য। আরেকটি সমস্যা হল সোভিয়েত আমলে নির্মিত বেশির ভাগ সড়কগুলির মধ্য দিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চলে গেছে, ফলে এসমস্ত সড়ক সীমান্ত প্রোটোকলগুলি মেনে চলতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়।

খাদ্য: বেশবারমাক কিরগিজদের জাতীয় খাবার। বেশবারমাক হচ্ছে চিকন নুডলস সাথে কুচানো মাংস। বিভিন্ন ধরণের মাংস কিরগিজ খাবারের অপরিহার্য অংশ। সর্বাধিক জনপ্রিয় খাবার ঘোড়ার মাংস। এছাড়াও খাবারের মধ্যে  ভেড়ার ভাজা কলিজা এবং ঘোড়ার মাংস থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার। যদিও এটি কাজাখস্তান এবং জিনজিয়াংয়ের সেখানে এটি নারিন নামে পরিচিত। এটা ঘোড়ার মাংস দিয়ে তৈরী হয়।

পানীয়: একটি জনপ্রিয় কিরগিজ পানীয় হচ্ছে কিমিজ। এটা সামান্য এলকোহলিক যা ঘোটকীর দুধ থেকে পাচনের মাধ্যমে তৈরী করা হয়।এটি ইউরেশীয় যাযাবর সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই পানীয় কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়াতেও পান করা হয়। নতুন কিমিজ শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে(মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত) পাওয়া যায়। বোতলজাত কিমিজ দেশের সব খাদ্যের দোকানে সারা বছর পাওয়া যায়।

ভিসা কি করে নিবেন