মোহাম্মদ মজনুজ্জামান:
আলমাতি কাজাকিস্তানের পুরাতন রাজধানী। ১৯২১ সালে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল “আলমা-আতা” এটি রাশিয়ানরূপ আর এর কাজাক নাম হচ্ছে “আলমাতি”(আক্ষরিক অর্থে আপেলের জনক) যা এই অঞ্চলে অনেকগুলি আপেল গাছকে ইঙ্গিত করে। কাজাকিস্তানের মাতৃভাষা কাজাক। তবে অফিসিয়ালী কাজাক ও রাশিয়ান ভাষা ব্যবহৃত হয়।
১৯৯১ সালে কাজাকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পরে,শহরের নামটি তার রাশিয়ান রূপ আলমা-আতা থেকে পরিবর্তিত করে এর কাজাক রূপ আলমাতি করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে কাজাকিস্তানের রাজধানী আলমাতি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আকমোলা, আস্তানায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে নুর-সুলতান হিসেবে পরিচিত। নুর-সুলতান নাজারবায়েভ ১৯৯১ সালের দেশ স্বাধীনের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করে ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। তাকে সম্মান জানিয়ে রাজধানীর নামকরণ করা হয় নুর-সুলতান।
এটি মধ্য এশিয়ার এমন একটি দেশ যার কিছু অংশ ইউরোপকেও টাচ করেছে। বিশ্বের সবথেকে বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত দেশ কাজাকিস্তান। দেশটি দেখতে অনেক বেশী সুন্দর। এটি বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম দেশ। এদেশের সীমানা চার দিক থেকে অন্যান্য দেশের সাথে মিলিত হয়েছে। এদেশের বর্ডার রাশিয়া, চীন, উজবেকিস্তান, কিরগিস্তান এবং তুর্কমিনিস্তানের সাথে রয়েছে। এর জনসংখ্যা প্রায় ১৮.৫১ মিলিয়ন ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী। দেশটি জনসংখ্যার দিক থেকে ৬৪তম। জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ বেশি। প্রতি স্কয়ার কিলোমিটারে মাত্র ৭জন লোক বসবাস করে। ৫৮ শতাংশ লোক শহরে বাস করে আর ৪২ শতাংশ লোক গ্রামে বাস করে। এদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে তেল ও গ্যাস। কাজাকিস্তান সেন্টাল এশিয়ার সবচেয়ে ধনী দেশ। দেশটির মুদ্রার নাম টেঙ্গি।
প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ কাজাকিস্তান। দেশটি মুসলিম অধ্যুষিত কিন্তু সেখানে মুসলিম কালচারের নামগন্ধ চোখে পড়ে না। মুসলমানদের জন্য নামাজ হচ্ছে বেহেশতের চাবিকাঠি। কাজাক মুসলিমদের কাছে সেটা যেন মামুলি ব্যাপার। নামাজের সাথে যেন তাদের তেমন পরিচয় নেই। ওরা একটাই বুঝে খাও দাও ফুর্তি করো আগামিকাল বাঁচবে কিনা বলতে পারো। মসজিদের সংখ্যা নগন্য। কাজাকিস্তানে ২৫ দিন ছিলাম। প্রতিদিনই অন্তত ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার ঘুরে বেরিয়েছি এর মধ্যে মাত্র একটি মসজিদ চোখে পড়েছে। তবে দুঃখের বিষয় আজান শুনিনি। আলাপ করে জানতে পারলাম উচ্চস্বরে আযান দেয়া নিষেধ। আর মসজিদ তৈরি করতে হলে সরকারের পারমিশন নিতে হয়। সরকার পারমিশন দিলে তবেই মসজিদ তৈরি করা যায়। অতচ কাজাকিস্তানে ৭০ শতাংশ মুসলমান বসবাস করে।
কাজাকিন্তানে ভ্রমণ করা কঠিন। সেখানকার লোকেরা ইংরেজি কম বুজে। এজন্য আমাকে প্রথম দিন বেশ সমস্যা পোহাতে হয়েছে। রাত্রি যাপনের জন্য হোটেল খুঁজতে গিয়ে মহা বিপদে পড়ি। ওরা হোটেল চিনেনা অপরদিকে আমরা ওদের ভাষা জানিনা। এই সমস্যার জন্য আমাদেরকে ২ ঘন্টা হোটেল খুঁজতে হয়েছে। অবশেষে চড়া দামে থ্রিস্টার হোটেলে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। সেখানকার হোটেল থেকে চেক আউটের নিয়ম আমাদের দেশের চেয়ে আলাদা। ইচ্ছে করলে অর্ধেক টাকার বিনিময়ে ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২ ঘন্টার জন্য হোটেল বুকিং করা যায়। কম দামের হোটেল না পাওয়াতে শুধু রাত্রিযাপনের জন্য ১২ ঘন্টার জন্য হোটেল বুক করলাম। রাতে কাছে ভাতের কোন হোটেল না পাওয়াতে বিস্কুট আর পানি খেয়ে সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমি পড়ি।
কাজাকিস্তানে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই। সেজন্য আমরা চিন্তিত ছিলাম। এ পরিস্থিতিতে কার সাহায্য নেয়া যায় সঙ্গীরা বল্লো পাকিস্তান অথবা ভারত দূতাবাস সাথে যোগাযোগ করা যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে প্রথমে ভারতের দূতাবাসের ফোন নাম্বার নিলাম এবং সেখানে ফোন করে কনন্সুলার হারজিৎ সিং এর সাথে আমাদের পরিচয় দিয়ে সমস্যার কথা বললাম। তিনি আমাদের পরিচয় জেনে তার অফিসে দেখা করার জন্য বললেন। আমরা তার আশ্বাস পেয়ে কালবিলম্ব না করে ছুটে গেলাম। তিনি আমাদের ইন্টারভিউ নিলেন। আমরা “মাদক মুক্ত বিশ্ব” শ্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি, তার পুরো ডকুমেন্ট এবং বিভিন্ন দেশের পত্রিকা কাটিং খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন। সবকিছু দেখে তারপর বললেন কাজাকিস্তানে আমাদের প্রোগ্রামের জন্য কোন চিন্তা করতে হবে না। তিনি সব ব্যবস্থা করে দেবেন সেই সাথে থাকার ব্যবস্থা করলেন। পরদিন কাজাকিস্তান ন্যাশনাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে ব্যবস্থা করলেন, সেখানকার ডা: সুরেন্দ্র ও ডা: অসুকের মাধ্যমে। কাজাকিস্তান ন্যাশনাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম দিয়ে শুরু করলাম আমাদের কাজাকিস্তানের কাজ। আলমাতিতে অবস্থিত ভারত কন্সুলেটের কন্সুলার হারজিত সিং সব সময় আমাদেরকে অভিভাবকের মতো দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার সহযোগিতা না পেলে সেখানে কাজ করা কঠিন ছিল।
কাজাকিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে ভিসার পাশাপাশি পুলিশ রেজিস্ট্রেশন ও গুরুত্বপূর্ণ। এন্ট্রির ৫ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। পুলিশ রেজিস্ট্রেশন না করলে সেদেশ থেকে চেক আউট সম্ভব না। যে সমস্যায় আমরা পরে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছিল।
আপনিও চাইলে আমাদের সেবা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন এই দেশে ঘুরে আসতে পারবেন।যোগাযোগ: Call/WhatsApp +88-01903-845418। এছাড়াও


Recent Comments